![]() |
দোকানের চিত্র |
সুজন একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী, যিনি শুধু নিজের সফলতা নিয়েই সন্তুষ্ট নন, বরং অন্যদের সফল হতে সাহায্য করাকেই নিজের দায়িত্ব মনে করেন। রাসেল তাঁরই একজন ছাত্র, যাকে তিনি হাতে-কলমে শিখিয়েছেন কীভাবে একটি ফাস্টফুড ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। খাবারের গুণমান, কাস্টমার সেবা, এবং ব্যবসার নীতিমালা সবকিছু সুজনের কাছ থেকেই রাসেল শিখেছে। সুজনের দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণায় রাসেল আজ একজন স্বাবলম্বী তরুণ উদ্যোক্তা। সুজন শুধু ব্যবসার কৌশল শেখাননি, বরং একজন তরুণকে জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও আত্মবিশ্বাস দিয়েছেন।
রাসেল ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, সুজনের সহায়তায় তিনি আজ নিজেই একটি ফাস্টফুড দোকানের মালিক। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তাঁরা দুজনেই নবীনগর থেকে এসে খাগানে এই দোকানটি শুরু করেছেন। নতুন জায়গায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার এই সাহসিকতা তাঁদের গল্পকে আরও অনুপ্রেরণামূলক করে তুলেছে। অজানা পরিবেশে, নতুন মানুষের মাঝে নিজেদের খাবার ও সেবার মান দিয়ে জায়গা করে নেওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু সুজন ও রাসেল সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন এবং সফলভাবে তা অতিক্রম করেছেন।
![]() |
চিকেন: বার্গার |
নিজ হাতে দোকান সাজিয়ে, নিজেই রান্না করে, রাসেল এখন একজন স্বাবলম্বী তরুণ। তাঁর নিষ্ঠা ও পরিশ্রমে দোকানটি আজ স্থানীয়দের প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি দোকানে সময় দেন, ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে খাবার প্রস্তুত করেন, এবং সুজনের সঙ্গে পরামর্শ করে নতুন নতুন আইটেম যুক্ত করেন। তাঁদের লক্ষ্য শুধু ব্যবসা নয়, বরং মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু খাবার পৌঁছে দেওয়া।
এই দোকানে পাওয়া যায় নানা মুখরোচক ফাস্টফুড, যা ক্রেতাদের মন জয় করে নিয়েছে। খাবারের তালিকায় রয়েছে চিংড়ির মাতা, চিংড়ি পোড়া, চিকেন বার্গার, মুরগির মাংসের সাবলেট, ডিমের স্যান্ডউইচ, চিকেন চপ এবং ডিমের চপ। প্রতিটি খাবারই সুস্বাদু, স্বাস্থ্যসম্মত এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পরিবেশিত হয়। খাবারের স্বাদ ও মান বজায় রাখতে রাসেল প্রতিদিন নিজ হাতে রান্না করেন এবং সুজনের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিটি পদে যত্নের ছোঁয়া রাখেন। তাঁরা খাবারের উপকরণ সংগ্রহ থেকে শুরু করে পরিবেশন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে সতর্কতা অবলম্বন করেন, যাতে ক্রেতারা সন্তুষ্ট থাকেন এবং বারবার ফিরে আসেন।
তাঁরা শুধু একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নন। বিভিন্ন মাহফিলে অংশগ্রহণ করে তাঁরা তাঁদের খাবার বিক্রি করেন, এবং সেইসব ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করেন। এই ধরনের পরিবেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে তাঁদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়, কিন্তু তাঁরা কখনো মানের সঙ্গে আপস করেন না। বরং ক্রেতাদের স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন খাবার দেওয়ার জন্য তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন। মাহফিলের মতো জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় তাঁরা সময়মতো খাবার প্রস্তুত করে, দ্রুত পরিবেশন করে এবং ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করেন। এই দক্ষতা তাঁদের ব্যবসার অন্যতম শক্তি।
এই উদ্যোগ শুধু একটি দোকান নয়, এটি একটি অনুপ্রেরণার গল্প। যেখানে একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রকে শুধু ব্যবসা শেখাননি, বরং জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিয়েছেন। সুজন ও রাসেলের এই বন্ধন, তাঁদের পরিশ্রম, এবং খাবারের প্রতি ভালোবাসা সব মিলিয়ে এটি একটি সফলতার গল্প, যা অন্যদের জন্যও পথপ্রদর্শক হতে পারে। তাঁদের গল্প প্রমাণ করে, সঠিক দিকনির্দেশনা, অধ্যবসায়, এবং আন্তরিকতা থাকলে যেকোনো মানুষ নিজের ভাগ্য গড়ে নিতে পারে। নবীনগর থেকে খাগানে এসে তাঁরা শুধু একটি দোকান চালু করেননি, বরং একটি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
![]() |
খাবার পরিবেশন |
এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তরুণদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা ও উদ্যম সৃষ্টি করে। সুজন ও রাসেলের মতো মানুষরা আমাদের মনে করিয়ে দেন, ব্যবসা শুধু লাভের জন্য নয় মানুষের সেবা, সম্মান এবং আত্মবিশ্বাস গড়ার একটি মাধ্যম। তাঁদের ফাস্টফুড দোকানটি এখন শুধু খাবারের জায়গা নয়, বরং একটি গল্পের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে প্রতিদিন নতুন অধ্যায় রচিত হচ্ছে।